বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাত একটি সম্ভাবনাময় খাত হলেও এখানে খামারিরা সবসময় ন্যায্য দাম পান না। বিশেষ করে কোম্পানির মুরগির বাজারে সিন্ডিকেটের আগ্রাসন খামারিদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টি বুঝতে হলে কয়েকটি দিক থেকে আলোচনা করা প্রয়োজন।
১. কোম্পানির প্রভাব ও বাজার নিয়ন্ত্রণ
বড় বড় কোম্পানি ব্রয়লার বাচ্চা, খাদ্য (ফিড), ওষুধ, এমনকি বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সবকিছুতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। তারা যখন চাইছে তখন বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, আবার কোনো সময় কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে খামারিরা উৎপাদনের শুরুতেই ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়ছেন।
২. সিন্ডিকেটের আগ্রাসন
বাজারে একটি গোপন সিন্ডিকেট কাজ করে, যারা খামারিদের উৎপাদিত মুরগি সস্তায় কিনে নিয়ে বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করে। এতে খামারিরা উৎপাদন খরচও ওঠাতে পারেন না, অথচ সাধারণ ভোক্তাদের বাজারে যেতে হয় উচ্চ দামে মুরগি কিনতে।
৩. খামারিদের ক্ষতির চক্র
খামারি যখন বাজারে মুরগি বিক্রি করতে যান, তখন দামের নিয়ন্ত্রণ থাকে সিন্ডিকেটের হাতে। তারা খামারির জরুরি বিক্রির প্রয়োজন বুঝে দাম কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে খাদ্য ও ওষুধ কোম্পানিগুলো সবসময় দামের চাপ বাড়ায়। ফলস্বরূপ খামারিরা দিন শেষে লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
৪. ভোক্তা ও খামারির মধ্যে বৈষম্য
খামারি কম দামে বিক্রি করলেও ভোক্তা উচ্চ দামে কিনছেন। এই ব্যবধানের পুরো লাভ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে, যাদের নিয়ন্ত্রণ মূলত কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেটের হাতে।
৫. সমাধানের পথ
- সরকারিভাবে দাম নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নীতি নেওয়া দরকার।
- খামারিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র বাজার ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যেখানে তারা সরাসরি ভোক্তার কাছে বিক্রি করতে পারবেন।
- খাদ্য ও বাচ্চার দামে স্থিতিশীলতা আনার জন্য নজরদারি বাড়াতে হবে।
- খামারিদের জন্য সমবায় ভিত্তিক বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে।
কোম্পানির সিন্ডিকেট খামারিদের জন্য এক ধরনের অদৃশ্য শৃঙ্খল তৈরি করেছে। তারা উৎপাদন করেও সঠিক দাম পাচ্ছেন না, আর লোকসানের কারণে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে পোল্ট্রি শিল্পের প্রকৃত সম্ভাবনা কখনোই বাস্তবে রূপ নেবে না।
