Uncategorized

খামার পরিষ্কার এবং রোগমুক্ত রাখতে খামারীদের জন্য কার্যকরী উপায়

বাংলাদেশে বর্তমানে হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খামার একটি জনপ্রিয় এবং লাভজনক ব্যবসা। তুলনামূলক স্বল্প সময়ে ভালো আয় হওয়ার কারণে অনেক উদ্যোক্তা এ খাতে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে খামারের উৎপাদন টেকসই ও লাভজনক করতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো খামারকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। খামার পরিষ্কার না রাখলে বিভিন্ন রোগবালাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, মৃত্যুহার বেড়ে যায় এবং খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। তাই খামারকে স্বাস্থ্যকর রাখতে নিয়মিত যত্ন ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। নিচে খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন  এবং রোগমুক্ত  রাখার জন্য দশটি কার্যকরী উপায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো। ১. প্রতিদিন ঝাড়ু ও ময়লা অপসারণ খামারের ভেতর প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে খাবারের উচ্ছিষ্ট, পালক, মল এবং ময়লা সরাতে হবে। মুরগি বা গবাদি পশুর মল জমে থাকলে তাতে গ্যাস ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় যা শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি রোগ ছড়াতে পারে। তাই প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার করার অভ্যাস তৈরি করা খামারের জন্য সবচেয়ে মৌলিক কাজ। ২. লিটার ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা বিশেষ করে মুরগির খামারে লিটার (কাঠের গুঁড়া, ধানের কুঁড়া বা চালের খোসা) শুকনো ও পরিষ্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি। ভেজা লিটারেই কক্সিডিওসিসসহ নানা রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদি লিটার ভিজে যায়, তাহলে তা তৎক্ষণাৎ পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়া সপ্তাহে একবার লিটার নাড়াচাড়া করলে তা শুকনো থাকে এবং দুর্গন্ধও কমে। ৩. পানির পাত্র পরিষ্কার রাখা খামারের পানির পাত্র প্রতিদিন ধুয়ে পরিষ্কার পানি দিতে হবে। অনেক সময় পাত্রে শৈবাল বা ময়লা জমে যায়, যা পানির গুণগত মান নষ্ট করে। এর ফলে মুরগি বা গবাদি পশুর পেটের রোগ দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে পানির পাত্র ধুয়ে পরিষ্কার পানি দেওয়া উচিত। ৪. খাবারের পাত্র ধোয়া খাবারের পাত্রে পুরনো খাবার জমে থাকলে তাতে ছত্রাক জন্মায় এবং ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়। এর ফলে মুরগির বৃদ্ধি কমে যায় এবং হজমে সমস্যা হয়। তাই প্রতিদিন খাবারের পাত্র পরিষ্কার করা জরুরি। নতুন খাবার দেওয়ার আগে পুরনো খাবার ফেলে দিতে হবে। ৫. জীবাণুনাশক ব্যবহার খামারের মেঝে, দেয়াল, খাঁচা ও সরঞ্জাম নিয়মিত অনুমোদিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে অন্তত একদিন জীবাণুনাশক স্প্রে করলে খামার অনেকাংশে রোগমুক্ত থাকে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, জীবাণুনাশক যেন প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর না হয়। সাধারণত খামার ফাঁকা থাকলে গভীরভাবে জীবাণুমুক্ত করা আরও কার্যকর হয়। ৬. বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা খামারের ভেতরে পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন বা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে গরম, আর্দ্রতা ও গ্যাস জমে যায়। এতে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খামারে জানালা বা ফ্যান ব্যবহার করে বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, শীতে অতিরিক্ত ঠান্ডা বাতাস যেন সরাসরি প্রাণীর গায়ে না লাগে। ৭. বর্জ্য সঠিকভাবে ফেলা খামারের ভেতরে কোনো মৃত মুরগি বা পশু পড়ে থাকলে তা অবিলম্বে সরিয়ে ফেলা জরুরি। সেগুলো মাটির নিচে চাপা দিতে হবে অথবা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ফেলা উচিত। এছাড়া খামারের দৈনন্দিন বর্জ্য ও মলমূত্র আলাদা জায়গায় জমা করতে হবে যাতে খামারের ভেতরে দুর্গন্ধ না হয়। ৮. জুতা ও পোশাকের পরিচ্ছন্নতা খামারে প্রবেশের সময় আলাদা জুতা ও পোশাক ব্যবহার করা উচিত। বাইরের জুতা দিয়ে খামারে প্রবেশ করলে বাইরের জীবাণু ভেতরে চলে আসতে পারে। অনেক সময় খামারে প্রবেশের আগে জুতার তলায় জীবাণুনাশক পানিতে ডুবিয়ে নেওয়া কার্যকর হয়। এতে রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। ৯. খামারের আশপাশ পরিষ্কার রাখা খামারের চারপাশের ঝোপঝাড়, নোংরা পানি বা আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। ঝোপঝাড়ে ইঁদুর, সাপ ও মশার বসবাস বেড়ে যায়, যা খামারের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া নোংরা পানিতে মশা জন্মায় এবং আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই খামারের ভেতরের পাশাপাশি আশপাশও পরিষ্কার রাখা জরুরি। ১০. নির্দিষ্ট সময়ে গভীর পরিষ্কার প্রতিটি খামার ব্যাচ শেষ হওয়ার পর খামার খালি করে সম্পূর্ণভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করা উচিত। এ সময় খামারের মেঝে, দেয়াল, ফ্যান, পানির লাইন এবং সমস্ত সরঞ্জাম ভালোভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর অন্তত এক সপ্তাহ খামার খালি রেখে শুকিয়ে নেওয়া হলে নতুন ব্যাচে রোগবালাইয়ের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। খামার পরিষ্কার রাখা শুধু রোগ প্রতিরোধের জন্যই নয়, বরং উৎপাদন ও লাভ বাড়ানোর জন্যও অপরিহার্য। প্রতিদিনের ছোট ছোট যত্ন, যেমন পানির পাত্র ধোয়া, লিটার শুকনো রাখা বা আশপাশ পরিষ্কার করা, খামারের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। অনেক সময় খামারিরা খাদ্য ও ওষুধে বেশি খরচ করেন, কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন না। অথচ এটি সবচেয়ে সহজ, কার্যকর এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি খামারকে সুস্থ রাখার জন্য। তাই যে কোনো খামারিকে শুরু থেকেই খামারের পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।

খামার পরিষ্কার এবং রোগমুক্ত রাখতে খামারীদের জন্য কার্যকরী উপায় Read Post »

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে ব্রয়লার মুরগি পালনের ১০টি বড় চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগি পালন বর্তমানে একটি জনপ্রিয় এবং লাভজনক খামার ব্যবসা। তুলনামূলক কম সময়ে এবং স্বল্প বিনিয়োগে ভালো আয় পাওয়া যায় বলে অনেক উদ্যোক্তা, কৃষক এমনকি শিক্ষিত তরুণরাও এ খাতে ঝুঁকছেন। তবে লাভের পাশাপাশি এ খাতে নানান ধরনের ঝুঁকি রয়েছে, যেগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা না করলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এই লেখায় বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে ব্রয়লার মুরগি পালনের প্রধান ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। ১. রোগবালাই ও মৃত্যু ঝুঁকি ব্রয়লার মুরগি তুলনামূলকভাবে সংবেদনশীল। ছোটখাটো ত্রুটি হলে সহজেই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। নিউক্যাসল, গামবোরো, কক্সিডিওসিস, রানীক্ষেত, সালমোনেলা ইত্যাদি রোগ দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পুরো খামারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে হঠাৎ করে শতকরা ২০–৩০ শতাংশ মুরগি মারা যেতে পারে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে সঠিক ভ্যাকসিন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য। ২. বাজারদরের ওঠানামা বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগির বাজারদর কখনও কখনও অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। এক মাসে কেজিপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠলেও আবার অন্য সময় ১৩০ টাকায় নেমে আসে। খামারিরা খাবার, ওষুধ ও শ্রমে নির্দিষ্ট খরচ করেন, কিন্তু বিক্রির সময় দাম কমে গেলে লোকসান হয়। বাজারদরের অস্থিরতা খামারিদের জন্য অন্যতম বড় ঝুঁকি। ৩. খাবারের খরচ বৃদ্ধি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচের প্রায় ৬৫–৭০ শতাংশ যায় খাবারের পিছনে। সয়াবিন, ভুট্টা ও ফিডের দাম বেড়ে গেলে সরাসরি উৎপাদন খরচ বাড়ে। বাংলাদেশে ফিডের দাম প্রায়ই ওঠানামা করে, যার ফলে পরিকল্পিতভাবে লাভ হিসাব করা কঠিন হয়। অনেক সময় খামারিরা খাবারের খরচ মেটাতে গিয়ে লোকসান করেন। ৪. পরিবেশ ও আবহাওয়া বাংলাদেশ একটি গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার দেশ। গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমে মুরগির হিট স্ট্রোক হতে পারে। শীতে পর্যাপ্ত হিটিং না থাকলে ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দেয়। বজ্রপাত বা লোডশেডিংয়ের কারণে হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন হলেও মুরগির স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। সঠিক পরিবেশ না থাকলে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। ৫. ভেজাল ওষুধ ও ফিডের প্রভাব অনেক সময় বাজারে নিম্নমানের ওষুধ, ভেজাল ভ্যাকসিন বা নিম্নমানের খাবার পাওয়া যায়। এগুলো ব্যবহার করলে মুরগি ঠিকমতো বাড়ে না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভেজাল পণ্যের কারণে খামারিরা অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির মুখে পড়েন। ৬. আর্থিক ঝুঁকি খামার পরিচালনা করতে গিয়ে প্রাথমিক বিনিয়োগের পাশাপাশি মাসিক খরচ থাকে। খাবারের দাম বাড়া, বাজারদর কমে যাওয়া বা রোগের কারণে মৃত্যু হলে খামারিকে ঋণ নিতে হয়। অনেক সময় ব্যাংক ঋণ বা এনজিও ঋণের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে যায়। ফলে আর্থিকভাবে সংকটে পড়ার ঝুঁকি থাকে। ৭. ব্যবস্থাপনার ঘাটতি খামার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা না থাকলে অনেক ভুল হয়। যেমন— লিটার পরিবর্তন না করাএই ছোট ছোট ত্রুটিগুলো বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। নতুন উদ্যোক্তারা অভিজ্ঞতার অভাবে প্রায়ই এসব সমস্যায় পড়েন। ৮. পরিবহন ও বিপণন ঝুঁকি গ্রামাঞ্চলের খামার থেকে শহরে মুরগি আনা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হয়। পথে মুরগি মারা যাওয়া বা ওজন কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার ব্যবসায়ীদের দামের কারসাজির কারণে খামারিরা ন্যায্য দাম পান না। ফলে আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ৯. প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। বন্যা, ঘূর্ণিঝড় বা অতিবৃষ্টির কারণে খামারের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে ফ্যান বা হিটারের কাজ বন্ধ হয়ে মুরগি মারা যেতে পারে। এসব অপ্রত্যাশিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ খামারিদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ১০. সামাজিক ও আইনগত ঝুঁকি অনেক এলাকায় খামারের দুর্গন্ধ নিয়ে স্থানীয় জনগণের অভিযোগ থাকে। এতে সামাজিক বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। আবার সঠিক লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি বা আইনগত নিয়ম না মানলে জরিমানা বা খামার বন্ধের ঝুঁকি থাকে। বাংলাদেশে ব্রয়লার মুরগি পালন লাভজনক হলেও ঝুঁকি কম নয়। রোগবালাই, বাজারদরের ওঠানামা, খাবারের খরচ বৃদ্ধি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত সমস্যা, আর্থিক চাপ—সব মিলিয়ে খামারিদের সঠিক পরিকল্পনা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে এগোতে হয়। খামার থেকে ভালো আয় করতে হলে শুরুতেই ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা জরুরি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, মানসম্মত খাবার ও ওষুধ ব্যবহার করা, বাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা রাখা এবং জরুরি অবস্থার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা তৈরি করাই পারে খামারিকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে। অতএব, ব্রয়লার খামারে ঝুঁকি থাকলেও সতর্ক পরিকল্পনা ও সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে এই খাত থেকে উল্লেখযোগ্য আয় করা সম্ভব।

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে ব্রয়লার মুরগি পালনের ১০টি বড় চ্যালেঞ্জ Read Post »

বাজার সিন্ডিকেটের চাপে ভেঙে পড়ছে খামারিদের স্বপ্ন

বাংলাদেশে পোল্ট্রি খাত একটি সম্ভাবনাময় খাত হলেও এখানে খামারিরা সবসময় ন্যায্য দাম পান না। বিশেষ করে কোম্পানির মুরগির বাজারে সিন্ডিকেটের আগ্রাসন খামারিদের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টি বুঝতে হলে কয়েকটি দিক থেকে আলোচনা করা প্রয়োজন। ১. কোম্পানির প্রভাব ও বাজার নিয়ন্ত্রণ বড় বড় কোম্পানি ব্রয়লার বাচ্চা, খাদ্য (ফিড), ওষুধ, এমনকি বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সবকিছুতে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে। তারা যখন চাইছে তখন বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, আবার কোনো সময় কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে খামারিরা উৎপাদনের শুরুতেই ক্ষতির ঝুঁকিতে পড়ছেন। ২. সিন্ডিকেটের আগ্রাসন বাজারে একটি গোপন সিন্ডিকেট কাজ করে, যারা খামারিদের উৎপাদিত মুরগি সস্তায় কিনে নিয়ে বেশি দামে খুচরা বাজারে বিক্রি করে। এতে খামারিরা উৎপাদন খরচও ওঠাতে পারেন না, অথচ সাধারণ ভোক্তাদের বাজারে যেতে হয় উচ্চ দামে মুরগি কিনতে। ৩. খামারিদের ক্ষতির চক্র খামারি যখন বাজারে মুরগি বিক্রি করতে যান, তখন দামের নিয়ন্ত্রণ থাকে সিন্ডিকেটের হাতে। তারা খামারির জরুরি বিক্রির প্রয়োজন বুঝে দাম কমিয়ে দেয়। অন্যদিকে খাদ্য ও ওষুধ কোম্পানিগুলো সবসময় দামের চাপ বাড়ায়। ফলস্বরূপ খামারিরা দিন শেষে লোকসানের বোঝা কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ৪. ভোক্তা ও খামারির মধ্যে বৈষম্য খামারি কম দামে বিক্রি করলেও ভোক্তা উচ্চ দামে কিনছেন। এই ব্যবধানের পুরো লাভ চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে, যাদের নিয়ন্ত্রণ মূলত কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত সিন্ডিকেটের হাতে। ৫. সমাধানের পথ কোম্পানির সিন্ডিকেট খামারিদের জন্য এক ধরনের অদৃশ্য শৃঙ্খল তৈরি করেছে। তারা উৎপাদন করেও সঠিক দাম পাচ্ছেন না, আর লোকসানের কারণে অনেকেই খামার বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে পোল্ট্রি শিল্পের প্রকৃত সম্ভাবনা কখনোই বাস্তবে রূপ নেবে না।

বাজার সিন্ডিকেটের চাপে ভেঙে পড়ছে খামারিদের স্বপ্ন Read Post »

শীতে সোনালী টাইগার মুরগির খামারে সঠিক ভেন্টিলেশন: স্বাস্থ্যকর খামারের মূল রহস্য

শীতকাল মানেই ঠান্ডা, কুয়াশা এবং অনেক সময় আর্দ্রতা। এই সময়টা সোনালী টাইগার মুরগির (Golden Sonali Chicken) জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, কারণ ঠান্ডার সঙ্গে সঙ্গে খামারের বাতাসে জমে থাকা অ্যামোনিয়া গ্যাস, আর্দ্রতা ও জীবাণু মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। এই সমস্যাগুলোর সমাধান একটাই — সঠিক ভেন্টিলেশন বা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। আসুন জেনে নিই, কীভাবে শীতেও আপনার খামারে ভালো ভেন্টিলেশন বজায় রাখা যায়। ১. খামারের গঠন: ওপেন শেড টাইপ খামার হলে কী করবেন? যদি আপনার খামার ওপেন শেড টাইপ হয়, তাহলে সেটা ভেন্টিলেশনের জন্য ইতিমধ্যেই ভালো। তবে শীতে ঠান্ডা হাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে: খামারের উপরে ১-২ ফুট খোলা রাখুন, যেন ভেতরের গরম বাতাস, আর্দ্রতা ও গ্যাস বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।নিচের দিকের খোলা অংশগুলোতে প্লাস্টিক শিট, জালি কাপড় বা বস্তা ঝুলিয়ে রাখুন যেন ঠান্ডা বাতাস সরাসরি মুরগির গায়ে না লাগে। বায়ু চলাচলের পথ এমনভাবে রাখুন যেন বাতাস উপরে দিয়ে ঢুকে অন্য পাশে বেরিয়ে যায় (ক্রস ভেন্টিলেশন)। ২. বাতাস ঢোকানো ও বের করে দেওয়া: কন্ট্রোল করতে শিখুন দিনে কমপক্ষে ২-৩ বার কিছু সময়ের জন্য জানালা বা সাইড খোলার ব্যবস্থা করুন। বড় খামার হলে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন যাতে গ্যাস ও আর্দ্রতা বের হয়ে যায়। তবে খেয়াল রাখবেন, ঠান্ডা বাতাস যেন পাখির শরীরের সাথে সরাসরি না লাগে। ৩. তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ খামারের ভিতরের তাপমাত্রা ২০–২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার চেষ্টা করুন। আর্দ্রতা বেশি হলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বাড়ে — তাই চেষ্টা করুন ৬০–৭০% এর মধ্যে রাখতে। দরকার হলে হিটার, ইনফ্রারেড ল্যাম্প বা ব্রুডার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে বাচ্চা মুরগির জন্য।  ৪. লিটার ব্যবস্থাপনা (বিছানা ব্যবস্থাপনা) ভালো ভেন্টিলেশনের সঙ্গে শুকনো ও পরিষ্কার লিটার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি। ৩-৫ ইঞ্চি পুরু লিটার ব্যবহার করুন (ধানের ছাই, কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি)। প্রতিদিন লিটার নেড়ে দিন যেন ভিজে না থাকে। যদি পানির পাশে ভেজা হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে ফেলুন।  ৫. সঠিক ভ্যান্টিলেশন কেন দরকার? ভালো ভ্যান্টিলেশন না থাকলে যেসব সমস্যা হতে পারে: অ্যামোনিয়া গ্যাস জমে শ্বাসকষ্ট হয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ডিম ও ওজন উৎপাদন কমে মুরগির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে  কিছু বাস্তবিক টিপস খামারিদের জন্য: বিষয় করণীয় ঠান্ডা বাতাস খামারের উত্তর ও পশ্চিম দিক ঢেকে দিন বাতাস চলাচল খামারের ছাদ ঢালু ও উচ্চতা ঠিক রাখুন তাপ উৎস বাচ্চা ও দুর্বল পাখিদের জন্য হিটার বা ব্রুডার ব্যবহার করুন গন্ধ গন্ধ বেশি হলে বুঝবেন বাতাস চলাচল ঠিক নেই পরিশেষে বলতে চাই, শীতকালে সোনালী টাইগার মুরগির খামারে সঠিক ভেন্টিলেশন রাখা মানেই আপনার খামারের মুনাফা বাড়ানো। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ শুধু রোগ প্রতিরোধ করে না, বরং খাদ্য রূপান্তরের হার ও ডিম উৎপাদন বাড়ায়। তাই খামারকে গরম রাখতে গিয়ে সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখবেন না।বরং বুঝে শুনে বাতাস চলাচল চালু রাখুন – এতে মুরগি থাকবে সুস্থ, খামার থাকবে লাভজনক।

শীতে সোনালী টাইগার মুরগির খামারে সঠিক ভেন্টিলেশন: স্বাস্থ্যকর খামারের মূল রহস্য Read Post »

Scroll to Top