শীতে সোনালী টাইগার মুরগির খামারে সঠিক ভেন্টিলেশন: স্বাস্থ্যকর খামারের মূল রহস্য

শীতকাল মানেই ঠান্ডা, কুয়াশা এবং অনেক সময় আর্দ্রতা। এই সময়টা সোনালী টাইগার মুরগির (Golden Sonali Chicken) জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জিং, কারণ ঠান্ডার সঙ্গে সঙ্গে খামারের বাতাসে জমে থাকা অ্যামোনিয়া গ্যাস, আর্দ্রতাজীবাণু মুরগির স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

এই সমস্যাগুলোর সমাধান একটাই — সঠিক ভেন্টিলেশন বা বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা। আসুন জেনে নিই, কীভাবে শীতেও আপনার খামারে ভালো ভেন্টিলেশন বজায় রাখা যায়।

১. খামারের গঠন: ওপেন শেড টাইপ খামার হলে কী করবেন?

যদি আপনার খামার ওপেন শেড টাইপ হয়, তাহলে সেটা ভেন্টিলেশনের জন্য ইতিমধ্যেই ভালো। তবে শীতে ঠান্ডা হাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে:

খামারের উপরে ১-২ ফুট খোলা রাখুন, যেন ভেতরের গরম বাতাস, আর্দ্রতা ও গ্যাস বাইরে বেরিয়ে যেতে পারে।
নিচের দিকের খোলা অংশগুলোতে প্লাস্টিক শিট, জালি কাপড় বা বস্তা ঝুলিয়ে রাখুন যেন ঠান্ডা বাতাস সরাসরি মুরগির গায়ে না লাগে।
বায়ু চলাচলের পথ এমনভাবে রাখুন যেন বাতাস উপরে দিয়ে ঢুকে অন্য পাশে বেরিয়ে যায় (ক্রস ভেন্টিলেশন)।

২. বাতাস ঢোকানো ও বের করে দেওয়া: কন্ট্রোল করতে শিখুন

দিনে কমপক্ষে ২-৩ বার কিছু সময়ের জন্য জানালা বা সাইড খোলার ব্যবস্থা করুন।

বড় খামার হলে এক্সস্ট ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন যাতে গ্যাস ও আর্দ্রতা বের হয়ে যায়।

তবে খেয়াল রাখবেন, ঠান্ডা বাতাস যেন পাখির শরীরের সাথে সরাসরি না লাগে।

৩. তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ

    খামারের ভিতরের তাপমাত্রা ২০–২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখার চেষ্টা করুন।

    আর্দ্রতা বেশি হলে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক বাড়ে — তাই চেষ্টা করুন ৬০–৭০% এর মধ্যে রাখতে।

    দরকার হলে হিটার, ইনফ্রারেড ল্যাম্প বা ব্রুডার ব্যবহার করুন, বিশেষ করে বাচ্চা মুরগির জন্য।

     ৪. লিটার ব্যবস্থাপনা (বিছানা ব্যবস্থাপনা)

    ভালো ভেন্টিলেশনের সঙ্গে শুকনো ও পরিষ্কার লিটার ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।

    ৩-৫ ইঞ্চি পুরু লিটার ব্যবহার করুন (ধানের ছাই, কাঠের গুঁড়া ইত্যাদি)।
    প্রতিদিন লিটার নেড়ে দিন যেন ভিজে না থাকে।
    যদি পানির পাশে ভেজা হয়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে ফেলুন।

     ৫. সঠিক ভ্যান্টিলেশন কেন দরকার?

    ভালো ভ্যান্টিলেশন না থাকলে যেসব সমস্যা হতে পারে:

    অ্যামোনিয়া গ্যাস জমে শ্বাসকষ্ট হয়
    রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
    ডিম ও ওজন উৎপাদন কমে
    মুরগির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে

     কিছু বাস্তবিক টিপস খামারিদের জন্য:

    বিষয়করণীয়
    ঠান্ডা বাতাসখামারের উত্তর ও পশ্চিম দিক ঢেকে দিন
    বাতাস চলাচলখামারের ছাদ ঢালু ও উচ্চতা ঠিক রাখুন
    তাপ উৎসবাচ্চা ও দুর্বল পাখিদের জন্য হিটার বা ব্রুডার ব্যবহার করুন
    গন্ধগন্ধ বেশি হলে বুঝবেন বাতাস চলাচল ঠিক নেই

    পরিশেষে বলতে চাই, শীতকালে সোনালী টাইগার মুরগির খামারে সঠিক ভেন্টিলেশন রাখা মানেই আপনার খামারের মুনাফা বাড়ানো। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ শুধু রোগ প্রতিরোধ করে না, বরং খাদ্য রূপান্তরের হার ও ডিম উৎপাদন বাড়ায়।

    তাই খামারকে গরম রাখতে গিয়ে সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখবেন না
    বরং বুঝে শুনে বাতাস চলাচল চালু রাখুন – এতে মুরগি থাকবে সুস্থ, খামার থাকবে লাভজনক।

    Leave a Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Scroll to Top